কালা ভুনা, রেজালা, মেজবানি গোশতের দেশে হঠাৎ করেই যেন বীফ স্টেকের
আবির্ভাব! আজকাল শুধু রেস্তোরাঁতে নয়, বাড়িতেও মহাসমারোহে তৈরি হচ্ছে বীফ
স্টেক।
“যদ্দেশে যদাচার” বলে একটা কথা আছে। চাইনিজ খাবারকে যেমন আমরা আপন করে
নিজেদের মত বানিয়ে নিয়েছি, বীফ স্টেকও এদেশে এসে ধোপদুরস্ত লাটসাহেব হয়ে
থাকতে পারেনি।
আজ কথা হবে বীফ স্টেক নিয়ে, অবশ্যই বাঙালি রুচির কথা মাথায় রেখে।
বন্ধু তোমার স্টেকের মাংস চিনে নিও
স্টেক নানারকম হয়। হাড়সহ মাংসের স্টেকে তেমন কোনো বাছবিচার নেই। তবে
হাড়বিহীন স্টেকের জন্য প্রথম কাজ মাংস বাছাই। গরুর পাঁজর বা ঘাড়ের মাংস
স্টেকের জন্য সবচেয়ে উপযোগী৷ কারণ এ মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়। মাংসের পরতে
পরতে চর্বির হালকা স্তর থাকা ভাল, এতে স্টেকটা বেশ জ্যুসি হবে।
অনেকেই চর্বি আর লিগামেন্টের মাঝে পার্থক্য করতে পারেন না। লিগামেন্ট দেখতে
সাদা পাতলা পর্দার মত। স্টেকের মাংসে লিগামেন্ট থাকলে স্টেক এক পর্যায়ে
কুঁচকে যাবে, আকৃতিটা মনমত হবে না।
মাংসের পুরুত্ব সাধারণত এক ইঞ্চি হয়। সাহেবি কিংবা বাঙালি সবখানেই মাংস বাছাইয়ের প্রক্রিয়া একই রকম
কত কী হয়নি দেয়া…
একটু নুন আর গোলমরিচ গুড়ো ছিটিয়ে এপিঠ ওপিঠ উল্টে দিলেই আদর্শ বীফ স্টেক
তৈরি।খুব বেশি হলে নানা জাতি হার্বের গুড়ো যোগ করা যেতে পারে।
কিন্তু বাঙালি মন অমন সাদাসিধে রেসিপি মানবে কেন বলুন তো? স্টেকে
বারবিকিউ সস, টম্যাটো কেচাপ, সয়া সস, লবণ গোলমরিচ দিয়ে এলাহি কান্ড না করলে
বিষয়টা আমাদের রুচির সাথে খুব একটা যাবে না।
এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো রেসিপি ফলো না করে নিজের মনমত মশলা আর সস দিয়ে স্টেক মেরিনেট করে ফেলুন।
বারবিকিউ সস হাতের কাছে না থাকলে ঘরে তৈরি তেঁতুলের চাটনী, সয়া সস, রসুন বাটা, আদা বাটা দিয়েই হয়ে যাবে মেরিনেশনের জন্য চমৎকার সস
তবে সাবধান! ভুলেও টেন্ডারাইজার হিসেবে পেঁপে বাটা দিয়ে বসবেন না! এতে স্টেক আর স্টেক থাকবে না। ভর্তা হয়ে যাবে।
এ বেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস- রান্নাঘরকে কেমিস্ট্রি ল্যাবের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন!
লবণ এক চামচ, সস সিকি কাপ এমন হিসেবে না গিয়ে নিজের মনমত উপকরণ দিয়ে মেরিনেট করে ফেলুন না!
রান্না মেপে মেপে হয় না, রান্না হয় আত্মবিশ্বাসে।
আর কতকাল ভাজবো আমি…
স্টেক বানাতে সাধারণ প্যান অথবা গ্রিল প্যান দুটোই ব্যবহার করা যায়। প্যানে তেল ব্রাশ করে মাঝারি আঁচে প্যান গরম করে নিতে হবে।
রেয়ার, মিডিয়াম আর ওয়েল ডান- এই হলো তিনরকমের স্টেক সেদ্ধ।
রেয়ার স্টেক বানাতে চাইলে প্রতি পিঠ ভাজতে বা গ্রিল করতে সময় নিতে হবে
মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট। এ স্টেক কাটলেই লাল রস গড়িয়ে পড়বে। যা রক্ত ভেবে
ভুল করতে পারেন। বাঙালিকে কোটি টাকা দিলেও রেয়ার স্টেক খাবে কি না তা নিয়ে
সন্দেহ আছে। অপহরণ করে মুক্তিপণের বদলে খাওয়াতে চাইলে অবশ্য ভিন্ন কথা!
মিডিয়াম স্টেকের সময়সীমা চার মিনিট প্রতি পিঠের জন্য। এটাও আমাদের মুখে রুচবে না।
এমনকি ওয়েলডান স্টেক, যা কি না এপিঠ ওপিঠ ছয় মিনিট করে মোট বারো মিনিট
ভাজা হচ্ছে, সেটাও আমাদের জন্য কাঁচা মাংসই বলা যায়। জীবন মরণ সমস্যায় না
পড়লে ওয়েলডান স্টেকও মুখে তোলার কোনো কারণ নেই।
ঠিক এ জায়গাতেই আমরা ভীনদেশী স্যুটেড বুটেড স্টেককে দেশি লুংগি আর গামছা
পরিয়ে দিই। যতক্ষণ না মাংস সেদ্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ রান্না চলছে চলবে!
উলটে পালটে ভেজে নেয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় মাঝে মাঝে স্টেকটা মেরিনেশন সস দিয়ে ব্রাশ করে নিতে ভুলবেন না যেন!
মনমত মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে পরিবেশন করুন দেশি বীফ স্টেক।
ভাল কথা, ভীনদেশী স্টেক আগেই চেখে দেখেছে এমন কাউকে খাওয়াতে চাইলে ভুলেও
বলবেন না এটা বীফ স্টেক। খেতে যত সুস্বাদুই হোক না কেন, তারা হেসেই
কুটিকুটি হয়ে যাবে। বরং এর দেশি কোনো নাম দিয়ে দিন। এই যেমন গরুর কালাভুনার
মত নাম রাখতে পারেন ‘গরুর কালা টুকরা’। একটু বনেদি ভাব আনতে ‘গরুর শাহী
কালা টুকরা’ নামও দেয়া যেতে পারে।
অথবা আপনার মনমত যে কোনো নাম!
Written by Afifa Abedin Sawda