শুক্রবারের দিন শুরু হোক সূরা কাহফের সাথে

হযরত মুসা (আঃ) এঁর সাথে খিজির (আঃ) এঁর কথোপকথনের কথা মনে আছে? ওই যে, মুসা (আঃ) এঁর তিনটা প্রশ্ন?

১।একি? ভালো নৌকা খারাপ করে দিলেন?

২।একি? বাচ্চা একটা ছেলেকে মেরে ফেললেন?

৩।আমরা এত কষ্ট করে দেয়াল মেরামত করলাম, আপনি তো কিছু পারিশ্রমিক নিলেও পারতেন?

মুসা (আঃ) কে নিজের সাথে চলার অনুমতি খিজির (আঃ) এই শর্তে দিয়েছিলেন যে, নিজে থেকেই না জানানো পর্যন্ত তাঁকে কোন প্রশ্ন করা যাবেনা। আর স্বাভাবিক কৌতুহলবশত মুসা (আঃ) তাঁকে প্রতিবারই প্রশ্ন করে ফেলেছিলেন ভুলে। তাই খিজির (আঃ) পৃথক হয়ে যান। যাবার আগে তার কাজগুলোর পেছনে কারণ ব্যাখা করে যান , আর প্রতিটি কাজ যে আল্লাহর নির্দেশেই করেছিলেন সেটাও জানিয়ে যান।

কখনো কি ভাবে দেখেছেন কেন আল্লাহ মুসা (আঃ) কে উনার সাথে দেখা করতে বললেন আর কেনই বা কুরআনে এটার উল্লেখ করলেন?

আমাদের সাথে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলো আমাদের পছন্দমাফিক হয়না। হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে-আমার সাথেই কেন হয়? আসলে আমাদের সাথে যা হয়, আমাদের ভালোর জন্যই হয়, যা বোঝার মতন যথেষ্ট হিকমাহ আমাদের নেই। আর তাই আল্লাহর উপর অন্ধভাবে ভরসা করাটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর।

১। ভালো নৌকা খারাপ করা হয়েছিল একারণে, সে দেশের রাজা জোরপূর্বক ভালো নৌকা ছিনিয়ে নিত। তাই নৌকাটা খুঁতযুক্ত করে বাড়তি টাকা দেয়া হয়েছিল যাতে পরে মেরামত করে নেয়া যায়।

আমাদের জীবনে দেখবেন, এমন অনেক ঘটনাই ঘটে, আর এগুলোকে আমরা আমাদের লস হিসেবে ধরে নেই। অথচ হয়ত যেটা ভেস্তে গেল, সেটাই আমার জন্য লসের কারণ ছিল, যা আমরা আমাদের সীমিত জ্ঞাণে বুঝতে পারিনা। হয়ত বিয়ে ভেঙে গেল, আমরা এটা নিয়ে কাতর হয়ে পড়লাম অথচ ভেঙে যাওয়াটাই আমার জন্য কল্যাণকর ছিল ।

২। যেই কিশোরকে মারা হয়েছিল, সে বড় হয়ে অবাধ্য হত, আল্লাহ তাই তাকে হত্যা করতে হুকুম দিয়েছিলেন, আর পরবর্তীতে ওই পিতামাতা দুটো শিশুর জন্মদান করেন, যারা পরবর্তীতে তাকওয়াবান হয়েছিল।

নিজেকে ওই অবস্থায় কল্পনা করে দেখিতো? আমার জলজ্যান্ত সুস্থ বাচ্চাটা হঠাত মরে গেলে আমি কি ভাবতে পারবো যে এটা আমার কল্যাণের জন্যই হয়েছে? সেই অবস্থাতেও ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর উপরেই ভরসা করাটাই কিন্তু আমাদের কাজ।

৩। দেয়ালের নিচে গুপ্তধন ছিল। আর তার উত্তরাধীকার ছিল নাবালক। আল্লাহ চাইলেন তারা সাবালক হওয়া পর্যন্ত যেন গুপ্তধন সুরক্ষিত থাকে, তাই খিজির (আঃ) আর মুসা (আঃ) দুজনে বিনা পারিশ্রমিকে কাজটা করেছিলেন, অথচ সেখানকার লোকজনের ভাল ব্যবহারও পাননি।

আমরা সব কাজ এর ফলাফল আল্লাহর কাছ থেকে পাবো এই ফোকাস করে যদি কাজটা করি, তাহলে মানুষের থেকে কি পেলাম সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে হতাশ হতে হয়না।

এই পৃথিবী একটা অস্থায়ী জায়গা। আর তাই এখানে সবকিছু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে যেতে হয়। সূরাহ কাহফ এর আয়াতগুলো আমাদের এই কথা গুলো মনে করিয়ে দেয়।

 

বাগানের ঘটনাটাই ধরা যাক, দুই বন্ধুর কথোপকথনে এক বন্ধু বেশ গর্ব করে বলল, "আমি তোমার চেয়ে ধনে মানে শ্রেষ্ঠ। আমার মনে হয়না এই বাগান কোনদিন কিছু হবে। আর যদি কিছু হয়ও, আমি আরো বেটার কিছু পাবো।" ফলাফল? পরদিনই সে বাগান এমনভাবে ধ্বংস হলো যেন সেখানে কিছু ছিলই না! আর সেই লোক মাথা চাপড়ে হায় হায় করতে লাগলো।

কাল কি হবে, সেটা কেউ জানেনা। সম্পদ আসলে আমাদের না, আমাদের ভোগ করতে দেয়া হয়েছে কিছুদিনের জন্য এটাই ভুলে যাই আমরা।

ইহুদীরা যখন আমাদের নবী (স) কে গুহাবাসীদের সম্পর্কে জানতে চাইল, মুহাম্মাদ (স) তখন বললেন আগামীকাল জানাবেন। তারপর? ওহী তো আসেনা। কাফেরদের গুঞ্জন বাড়তেই থাকে। অবশেষে আল্লাহ এ সূরাহ নাযিল করেন, এবং আমাদের নবী (স) কে সতর্ক করে দেন সব কিছুর শুরুতে ইন শা আল্লাহ যেন অবশ্যই বলা হয়।

আল্লাহ চাইলে কাল হবে, কারণ কাল কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনা।

যেই গুহাবাসীদের নামে এই সুরার নামকরণ, তাদের কথা বাদ গেলে চলবে? গোটা সমাজ যখন ছেয়ে গেল শিরকে, তখন কিছু অকুতোভয় যুবক প্রতিবাদ জানালো। তারা নিজেরাই সন্দিহান ছিল, কিভাবে এই সমাজে শিরক দূর হবে! আল্লাহ তাদের বহু যুগ ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন; কেবল এটা দেখানোর জন্য, আল্লাহ চান তো সব কিছু বদলে যেতে পারে। তার জন্য আমাদের প্রয়োজন নেই। বরং আমাদের নিজেদের জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করা। আমরা অধিকাংশই এটা ভুলে যাই। ভাবি, চারদিকে এত অত্যাচার, সব জায়গায় জালিম শাসক, আমি প্রতিবাদ করে কি হবে? সেই যুবকেরা প্রতিবাদ করেছিল, আর কিছুই না। ঘুম থেকে জেগে দেখল, কিছুই আর আগের মত নেই। ইসলাম থেকে যাবে, তোমাকে সহ অথবা তোমাকে ছাড়া, কিছু তুমি ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেলে সব হারিয়ে ফেলবে...।

আরো কত না ঘটনার বর্ণনা এই সূরাহ কাহফে! বলতে গেলে শেষ হবেনা। তাই অর্থসহ পড়ুন, আর বসে বসে ভাবুন চুপটি করে, ভাবার আছে অনেক কিছু।

সূরাহ কাহফের কিছু অসাধারণ ফজিলত হল

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর হবে।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যেমনভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটা নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং যে শেষ দশ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে এবং দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ১০৭২২)

শুক্রবারে তাই দিন কাটুক সূরাহ কাহফের সাথে।

 

 

 

Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.

  • আমি হিজাবে কমফোর্টেবল না

    Modest Collection

    আমি হিজাবে কমফোর্টেবল না।পরতেই হবে তাই পরি। আর ডিজাইনও কমফোর্ট কে মাথায় রেখে করি। বাইরে আমি পারতপক্ষে বের হইনা, আর বাসায় হিজাব তো দূর কি বাত, হুট করে কোন গেস্ট...

    আমি হিজাবে কমফোর্টেবল না

    Modest Collection

    আমি হিজাবে কমফোর্টেবল না।পরতেই হবে তাই পরি। আর ডিজাইনও কমফোর্ট কে মাথায় রেখে করি। বাইরে আমি পারতপক্ষে বের হইনা, আর বাসায় হিজাব তো দূর কি বাত, হুট করে কোন গেস্ট...

  • How to Choose the Right Size Abaya for Hajj

    Modest Collection

    Choosing the right size abaya for Hajj is not only a matter of comfort but also a reflection of your commitment to this sacred journey. By following these steps and...

    How to Choose the Right Size Abaya for Hajj

    Modest Collection

    Choosing the right size abaya for Hajj is not only a matter of comfort but also a reflection of your commitment to this sacred journey. By following these steps and...

  • A Comprehensive Guide with FAQs about Khimars

    Modest Collection

    How do you wear a Khimar? Why do you wear a Khimar? What do you wear under Khimar? What countries wear Khimar, and who wears Khimar?

    A Comprehensive Guide with FAQs about Khimars

    Modest Collection

    How do you wear a Khimar? Why do you wear a Khimar? What do you wear under Khimar? What countries wear Khimar, and who wears Khimar?

1 of 3

Featured collection