বাচ্চাদের কিভাবে ছোটবেলা থেকেই Modest dress পরানো যায়

আমরা যারা চাই আমাদের মেয়েরা বড় হয়ে হিজাব করুক, আমরা যেন কখনই এটা না ভাবি, যে হিজাব ফরজ হবার দিনই সে একদিনে হিজাব ধরে ফেলবে, এর আগে কোন প্রিপারেশনের প্রয়োজন নেই; কারণ এটা ভুল ধারণা।

সবকিছুই অভ্যাসের ব্যাপার।

আর অভ্যাস একদিনে তৈরি হয়না।

হিজাব অনেকটা অভ্যাসের ব্যাপার। অনেকেই বলেন, গরম লাগে বলে হিজাব করতে পারেন না। হিজাব পরলে গরম লাগে ঠিকই, কিন্তু অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে তখন খুব একটা গরম লাগেনা, বা গরম লাগলেও সেটার জন্য হিজাব খুলে ফেলার কথা মাথায় আসেনা। আর এই অভ্যাসের ব্যাপার নিয়েই আমি একটা লাইভে আলোচনা করেছিলাম, কি করে বাচ্চার কমফোর্ট জোন টা ক্রমে হিজাবের দিকে নেয়া যায়।

কয়েকটা বিষয়ে পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা যাক।

১। কমফোর্ট জোনটা তৈরি করার প্রসেসটা হবে খুব ধীরেঃ এই প্রসেস টা এতটাই ধীরে হবে যে, বাচ্চা কবে হিজাব ধরবে সে নিজেও টের পাবেনা। বাচ্চাদের ড্রেস নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাজামা পরিয়ে পা ঢেকে রাখার অভ্যাস করা যেতে পারে, এরপর হাত। বাচ্চাদের জন্য পরে হিজাব দেয়ার পক্ষে আমি কারণ বাচ্চাদের মাথা ঘামে প্রচুর। বড় হতে হতে মাথা ঘামার প্রবনতা কমে যায়।

২। বাচ্চাকে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না, আবার নিরুৎসাহিত করবেন না ঃ বাচ্চা যদি modest dress পরতে না চায়, তখন তার কথা মেনে নেবেন, পরে আবার চেষ্টা করবেন। শুরুতেই নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। সে কেন পরতে চায়না সেটা জানতে চাইবেন, তাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবেন।

আবার অনেক সময় বাচ্চারা শখ করে বোরকা পরতে চায়, নিকাব পরতে চায়। বাহুল্য মনে হলেও কিনে দেবেন। এখানেও নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না।

৩। বাচ্চার চারপাশের পরিবেশ হিজাবের জন্য উপযোগী করে তুলুনঃ শিশুরা চারপাশ থেকেই প্রভাবিত হয়, এমনকি আমরা বড়রাও হই। কথায় আছেনা-সঙ্গদোষে লোহা ভাসে? শিশুর আত্মীয়স্বজন যদি হিজাব না করে তাদের সাথে দেখাসাক্ষাতে যেন বেশ কিছুদিনের গ্যাপ থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না, আল্লাহ সহজ করুন । বাচ্চাদের ফ্রেন্ডরাও প্র্যাক্টিসিং ফ্যামিলির কিনা সেটা লক্ষ করুন। মাদ্রাসা আর ইসলামিক স্কুলগুলোতে এমনিতেই হিজাব পরে যেতে হয়, বিভিন্ন প্রোগ্রামে dress code হিসেবে modest wear থাকে। একটা ইসলামিক কালচারের মাঝে বড় হয় বাচ্চারা, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৪। স্ক্রিণ টাইম লিমিট করুনঃ বাচ্চা যেন অশ্লীল দৃশ্যের মুখোমুখি না হয় এব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। আমার বাচ্চারা কখনও নাচ গান সম্বলিত বলিউড ঢালিউডের মুভি দেখেনি। কার্টুন দেখেছে মাঝে মাঝে তাও সিলেক্টিভ কিছু। তাই হিরো হিরোইন, প্রেম, প্রেমে পরে নাচাগানা এইসব কনসেপ্ট এর সাথে ওরা পরিচিত নয়। বাচ্চারা বড় হতে হতে নানান অশ্লীলতা, পঙ্কিলতার মুখোমুখি হবেই সেটা অবশ্যম্ভাবি। কিন্তু যত পরে হয় ততই মঙ্গল। অশ্লীলতার মাঝে থাকতে থাকতে সেটাই একসময় স্বাভাবিক মনে হয়। ডিভাইসে আসক্ত বাচ্চাদের পরবর্তীতে হিজাবে অভ্যস্ত করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ভিডিও গেইমেও অশ্লীল পোষাক থাকে।

৫। নিজের লাইফস্টাইল ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করে যাবেন প্রতিনিয়তঃ আপনি যত বেশি মার্জিত হবেন, বাচ্চার তত বেশি সম্ভাবনা থাকবে শালীন হবার। প্যারেন্টকে দেখেই শেখে শিশুরা। অপব্যয়, গান বাজনা, মুভি সিরিয়াল দেখার অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রিত সময় দিন। এর বদলে আপনার বাচ্চাকে নিয়ে গল্প করা, কালার করা, এমনকি খেললেও ও আপনার সাথে কানেক্টেড ফিল করবে। চারপাশ থেকে প্রভাবিত কম হবে, বরং আপনাকে বেশি ফলো করবে। ঘরের কাজ করার সময় ওকে কিছু কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন, দু'জনেরই প্রোডাক্টিভ সময় কাটবে। বাচ্চার চারপাশের সার্কেল ইসলামিক না হলে এই কাজটা আরও বেশি জরুরী। বাচ্চাকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে প্যারেন্টকে সেক্ষেত্রে।

মায়ের সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পরতে বাচ্চারা ভালবাসে। তাই আপনার হিজাবের সাথে ম্যাচ করে বাচ্চার জন্য সুন্দর মডেস্ট ড্রেস বানিয়ে দিতে পারেন, এতে বাচ্চারা হিজাবে আরো আগ্রহী হবে।

৬। আল্লাহর কাছে চানঃ সবচেয়ে শেষে, কিন্তু সবচেয়ে জরুরী পয়েন্ট টা হল, আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য দু'আ করুন। যত পারুন, চান। মায়ের দু'আ বিফলে যায়না। আল্লাহ চাইলে যত বাধা-ই আসুক, দিন শেষে আপনার সন্তানের ভালটাই হবে। আপনার প্ল্যান মত হয়ত হবেনা, আল্লাহর প্ল্যান মাফিক হবে। তাতে কি, ভাল হওয়াটাই তো চাওয়া ছিল।

আল্লাহ আমাদের সন্তানদের সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমিন

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.